January 22, 2025, 11:16 pm
শিরোনাম :
দেবিদ্বারে জামায়াতের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত কুমিল্লায় সচেতন রাজনৈতিক ফোরাম এর উদ্যেগে মানববন্ধন ও স্মারক লিপি প্রদান দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমানকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দাউদকান্দিতে কর্মরত বিভিন্ন পত্রিকা, টেলিভিশন ও অনলাইন পোর্টালের সাংবাদিকরা দেবিদ্বারে (অবঃ) সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জমির মাটি কাটার অভিযোগে মানব বন্ধন খুলনায় রূপসা ব্রিজ সংলগ্ন বালির মাঠে এক মাসব্যাপী আনন্দ মেলার অনুমোদন পেলেন নাহিদা আক্তার লাকী কুমিল্লার নামে বিভাগ, ঢাকা-কুমিল্লা সরাসরি রেলপথ ও বিমান বন্দর পুনরায় চালুর দাবিতে সচেতন রাজনৈতিক ফোরামের মানববন্ধনের ডাক কুমিল্লায় বি এস টি আই ও জেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযানে অনুমোদনহীন খাদ্যপণ্য ও প্রসাধনী বিক্রির দায়ে জরিমানা কাজী নোমান আহমেদ ডিগ্রি কলেজে বার্ষিক ক্রিয়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান সামান্য বালুর জন্য শিশুকে ডোবার পানিতে ফেলে দিলেন শিক্ষক, ভিডিও ভাইরাল মৃধাবাড়ি ও শনির আখড়া রোডের বেহাল দশা

কিংবদন্তির অবসরে মলিন হলো স্কুলের আঙ্গিনা

মোঃ মাঈনুউদ্দিন বাহাদুর
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪
  • 6 বার দেখা হয়েছে

মোঃমাইনুদ্দিন বাহাদুর 

_*কিংবদন্তির অবসরে মলিন হলো স্কুলের আঙ্গিনা_

*আজ শেষ কর্মদিবসেও দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন সাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহজাহান*

★শিক্ষার্থীদের জ্ঞান আহরণের জন্য তার দরজা সর্বদা উন্মুক্ত
★নীতিগত কোনো চাহিদা রাখেননি অপূর্ণ
★শিক্ষার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমে অনবদ্য ভূমিকা

শিক্ষক শব্দটির মাঝে লুকিয়ে রয়েছে শত-সহস্র অজানা প্রশ্নের উত্তর। যার প্রদীপ শিখাতে দিকবিদিক ছড়িয়ে পরে জ্ঞানের সুভাস। নিজের মেধা ও শিষ্টাচার দিয়ে তিলে তিলে সুনিপুণ শৈলীতে গড়ে তুলেন জাতির ভবিষ্যৎ। প্রকৃতির নিষ্ঠুরতম নিয়মে সবকিছুর ছন্দপতন ঘটে সমাপ্তি ঘন্টার শব্দে, মানুষের জীবনের নেমে আসে বার্ধক্য। জাতিকে উন্নতির শিখরে অগ্রগামী হওয়ার পথ দেখানো শিক্ষককে বয়সের ভারে বলতে হয় বিদায়।

আজ৩০ডিসেম্বর (সোমবার) ছিল কুমিল্লা জেলার অন্যতম প্রাচীন বিদ্যাপীঠ মুরাদনগর দূর্গা রাম পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহজাহানের শেষ কর্মদিবস। অন্যসব দিনের মতো শেষ কর্মদিবসের কর্মব্যস্ত প্রহরে শেষ বারের মতো প্রধান শিক্ষক হিসেবে সূর্যোদয়ের কিছু মুহুর্ত পরেই বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে প্রবেশ করেন তিনি। সহকর্মীদের বোঝিয়ে দেন সকল কাজকর্ম। বার্ষিক ফলাফল বিতরণী অনুষ্ঠানের প্রাত্যহিক সমাবেশে শেষ বারের মতো বক্তব্য রাখতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে ক্ষুদে ছাত্রদের বলেন সততা ও নিষ্ঠার সাথে পথ চলে দেশের সম্পদ ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে।

প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের পূর্বে ছিলেন কুমিল্লা জিলা স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক। সেখান থেকে বদলি হয়ে মুরাদনগর উপজেলা সদরের স্কুলটির দায়িত্বগ্রহণের পর প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি ঘটেছিল তার। তার সান্নিধ্যে শিক্ষা নেওয়া অগণিত শিক্ষার্থী দেশে-বিদেশে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বরত। সদাহাস্যজ্বল ও দায়িত্বের প্রতি আপোষহীন এই শিক্ষকের হাত ধরে দূর্গা রাম পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২০২১ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী পেয়েছিল সোনার হরিণ জিপিএ-৫। শুধু শিক্ষা নয় সহ-শিক্ষা কার্যক্রমে তার অবদান অবিস্মরণীয়। স্কুলের স্কাউট, বিএনসিসি, রেডক্রিসেন্ট প্লাটুনের প্রয়োজনে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন। বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা, কবিতা আবৃতি, খেলাধূলায় তার সঠিক দিকনির্দেশনায় উপজেলা, জেলা ও বিভাগ পর্যায় হতে শিক্ষার্থীরা অর্জন করেছে অভাবনীয় সাফল্য। প্রধান শিক্ষকের কাজ হলো অফিসিয়াল কাজকর্ম সামলানো। চিরায়ত সেই ধারণার বদল ঘটিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের সময় তিনি নিজে সশরীরে নিয়েছেন অসংখ্য ক্লাস। সাধারণ গণিত, উচ্চতর গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান সহ যেকোনো বিষয়ে যেকোনো সময় তার কাছে শিক্ষার্থীরা শেখার জন্য গেলে কখনো কাউকে নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়নি। রাত ২টা হোক কিংবা ৩টা বিদ্যালয়ের উন্নতির কাজের বিষয়ে সময় তাকে ক্লান্তির আবহ দিতে হয়েছে চরম ব্যর্থ। স্কুলের অনুষ্ঠানের কাজে কখনো সারারাত অবস্থান করেছেন স্কুল আঙ্গিনায়। অন্যকে দায়িত্ব দিয়ে নিজে আয়াশের চিন্তা নয় বরং নিজে সশরীরে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে সর্বোচ্চ বিলিয়ে দিতে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি।

বিদ্যালয়টির সাবেক একাধিক শিক্ষার্থীরা তাদের প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পরেন এবং জানান, স্যারের পড়ানোর ক্ষমতা এতটাই অসাধারণ ছিল যে, যেসব অংক বারংবার করলেও সমস্যা হতো সেগুলো স্যার ১বার বোঝিয়ে দিলেই আমরা ২য় বার ভুল করিনি। শাহজাহান স্যার না আসলে আমাদের স্কুলে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল নিয়মকানুন কল্পনা করা যেতো না। তিনি সবসময় আমাদের দেশপ্রেম ও সততার উপদেশ দিয়েছেন। তার কর্মগুণে আমরা আলোকিত হতে পেরেছি। শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে শাসন করলেও স্যার ব্যক্তিগত জীবনে মানুষ হিসেবে ছিলেন কোমল হৃদয়। কোনো শিক্ষার্থী বলতে পারবেনা স্যারের কাছে নীতিগত কোনো চাহিদা নিয়ে গেলে সেটি অপূর্ণ ছিল। স্যারের কর্মজীবনের সমাপ্তি বেদনাদায়ক। স্যারের শূন্যতা কখনোই পূরণ হবে না। মোমবাতি যেমন নিজেকে পুড়িয়ে মানুষের মাঝে আলো ছড়িয়ে দেয় তেমনি স্যার নিজের অক্লান্ত শ্রমের বিনিময়ে আমাদের মানুষ করেছেন। স্কুলে পড়াকালীন সময়ে মানুষের জীবনের খুঁটি রচিত হয়। স্যারের তত্ত্বাবধানে আমাদের সেই খুঁটি শক্তিশালী হয়েছে প্রচুর। চাকুরী জীবনের সমাপ্তি ঘটলেও শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্কে কখনো সমাপ্তি ঘটে না। স্যার আমাদের কাছে সবসময় প্রিয় শিক্ষক হিসেবেই থাকবেন।

সাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহজাহান বলেন, জীবনের শুরু থেকেই চেয়েছি মানুষের জন্য কিছু করবো। তারই ধারাবাহিকতায় আমি চেষ্টা করেছি নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে হলেও যেন শিক্ষার্থীদের কিছু জ্ঞান বিতরণ করতে পারি। শুধু বই পড়লেই হবে না, বইয়ের জ্ঞান বাস্তব জীবনে ধারণ করে ভালো মানুষ হতে হবে এটা শিখিয়েছি সবাইকে। শিক্ষার্থীরা ভুল করলে হয়তো তাদের শুধরে নিতে শাসন করেছি। পৃথিবীতে কেউ সম্পূর্ণ নির্ভুল নয়, তাই বিশাল কর্মজীবনে আমার ভুলত্রুটি অবশ্যই সকলে মার্জনা করবেন। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে স্কুলে আসা আবার বিকেলে বাসায় যাওয়া এই রুটিনের ছন্দপতন হতে চলেছে। খুব মিস করবো চাকুরীরত সময়গুলো। অবসর সময়ে প্রতিটি স্মৃতি আমার চোখে ভাসবে। আমার শিক্ষার্থীরা যে যেখানেই রয়েছে সকলের জন্যই আমার দোয়া ও ভালোবাসা থাকবে। জ্ঞান আহরণের জন্য আমার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলবো আমার দরজা সবসময় উন্মুক্ত। আমার অবসরকালীন সময়ের জন্য সকলে মহান রবের নিকট দোয়া করবেন।

সংবাদ টি ভাল লাগলে সোস্যাইল মিডিয়ায় শেয়ার করুণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরও সংবাদ দেখুন
© All rights reserved © 2024 Comillar-alo
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themesba-lates1749691102